ড্রাগন ফল

পরিচিতি

বাংলা নামঃ      ড্রাগন ফল
ইংরেজী নামঃ    Dragon fruit
বৈজ্ঞানিক নামঃ  Hylocereus sp.

 

 Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/Dragon-fruit-red2-R.jpg

 Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/Initial-stage-of-flowering-.jpg

ড্রাগন ফ্রুট - লাল

ড্রাগন ফ্রুট গাছের ফুল

 


ড্রাগন ফলের উৎপত্তিস্থল সেট্রাল আমেরিকা সেন্ট্রল আমেরিকাতে ফলটি প্রবর্তন করা হয় এয়োদশ সেঞ্চুরীতে দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মালেশিয়াতে ফলের প্রবর্তন করা হয় বিংশ শতাব্দীর শেষে তবে ভিয়েতনামে ফল ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় তবে বর্তমানে ফলটি মেক্সিকো, সেন্ট্রাল দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে ড্রাগন ফল ক্যাকটাস পরিবারের একটি ফল গাছ দেখে সবাই  একে চির সবুজ  ক্যাক্টাস বলেই মনে করেন এশিয়ার মানুষের কাছে ফল অনেক জনপ্রিয়, হালকা মিষ্টি-মিষ্টি ফলকে ড্রাগন ফল ছাড়াও পিটাইয়া, টিহায়া ইত্যাদিও নামে ডাকা হয় গাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয় ফুল লম্বাটে সাদা হলুদ যাকে 'মুন ফ্লাওয়ার' অথবা 'রাতের রাণি' বলে অভিহিত করা হয় ইহা একটি লতানো গাছ কিন্তু এর কোন পাতা নেই ইহা একটি স্বপরাগায়িত ফুল তবে মাছি, মৌমাছি পোকা-মাকড় এর পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়ন করা যেতে পারে  গাছ উজ্জ্বল আলো পছন্দ করে গাছ .-. মিটার লম্বা হয় তবে গাছকে উপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের সাথে উপরের দিকে তুলে দেওয়া যেতে পারে এছাড়া উপরের দিকে ছোট মোটর গাড়ীর (মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার) চাকা বাঁশের চ্যাগারের মাধ্যে সেট করে খুব সহজেই গাছের লতা গুলোকে বাড়তে দেওয়া যায়

পুষ্টি ব্যবহার

সব ডায়েটের জন্য ফলটি উপযুক্ত ইহা ফাইবার সরবরাহ করে যা ল্যাক্সটিভ এবং লিভার এর জন্য উত্তম খাবারের পর ডের্জাট হিসাবে খাওয়া হয় ফলটি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত ফলটি জুস তৈরিতে প্রচুর পরিমানে ব্যবহৃত হয় এছাড়া মদ স্লেভার তৈরিতেও এর ব্যবহার অনস্বীকার্য প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ফাইবার . গাম, ফ্যাট .৬১ গ্রাম, এ্যাশ .৬৮ গ্রাম, ক্যারোটিন .০১২ গ্রাম, পানি ৮৩. গ্রাম, ফসফরাস ৩৬. মি. গ্রাম, এসকোরবিক এসিড . মি. গ্রাম, প্রোটিন .২২৯ গ্রাম, রিবোফ্লাবিন .০৪৫ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম . গ্রাম, নায়াসিন .৪৩০ মি. গ্রাম, আয়রন .৬৫ মি. গ্রাম থাকে ছাড়া ফল উৎপাদিত দেশ গুলোতে ফলের ডিশের সাথে ফল না থাকলে যেন ডিশ অপূর্ণ থাকে যা দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর একটি তাজা ফল খেয়ে মানব শরীরকে সতেজ সুস্থ্য রাখা যায় অনেক খানিই যে সমস্ত মানুষ ডায়াবেটিক রোগে ভোগেন তারা ফল খেয়ে শরীরের রক্তের গ্লুকোজকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ফ্রেশ ফলের চেয়ে শুষ্ক ফল বেশী কার্যকরী ফল সালাদের সাথেও ব্যবহার করা যায়

 

 

জলবায়ু মাটি

ফলটির জন্য শুষ্ক ট্রপিক্যাল জলবায়ু প্রয়োজন মধ্যম বৃষ্টিপাত ফলের জন্য ভালো উপযুক্ত বৃষ্টিপাত ৬০০-১৩০০ মি.মি. তাপমাত্রা ৩৮-৪০ ডিগ্রী সেঃ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে ফুল ঝরে পরে এবং ফলের পচন দেখা দেয় ফলে যেখানে পানি জমে না এমন উঁচু জমিতে ফলটি সঠিকভাবে চাষ করা যায় তবে ক্যাক্টাসের মতো  ফলটি শুষ্কতা সহ্য করতে পারে না উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে-দোঁয়াশ মাটিতে ফল চাষের জন্য উত্তম তবে অবশ্যই পানি সেচ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে

 

Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/dragon-fruit-tree-R.jpg

ফল সহ ড্রাগন ফ্রুট গাছ

জাত

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্যঃ
) লাল ড্রাগন ফল (লাল ফ্লেশ লাল চামড়া যুক্ত)
) হলুদ ড্রাগন ফল (হলুদ চামড়া সাদা ফ্লেশশযুক্ত)
) লাল ড্রাগন ফল (লাল চামড়া সাদা ফ্লেশশযুক্ত)
) কালচে লাল ড্রাগন ফল (কালো ফ্লেশশযুক্ত কালচে চামড়া যুক্ত)

 

 Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/Dragon-fruit-red2-R.jpg

 Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/dragon-fruit-yellow-R.jpg

Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/red-dragon-fruit.jpg

লাল ড্রাগন ফল

হলুদ ড্রাগন ফল (হলুদ চামড়া সাদা ফ্লেশশযুক্ত)

লাল ড্রাগন ফল (লাল চামড়া সাদা ফ্লেশশযুক্ত)

রোপন দুরত্ব

গাছ থেকে গাছের দূরত্ব মি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব মি. দিয়ে হেক্সাগোনাল পদ্ধতি ব্যবহার করে  গাছ লাগানো উত্তম তবে অবস্থাভেদে দূরত্ব কম বা বেশি দেওয়া যেতে পারে গাছ লাগানোর সময ৫০-৭০ ঘন সে.মি. আকারের গর্ত করে, পুরোগর্তের / ভাগ পঁচা গোবর দিয়ে ভালোভাবে মিশায়ে গাছ লাগানো ভাল তবে গোবরের পরিমাণ গর্তের আকার কম বা বেশী হতে পারে ক্যাকটেসি পরিবারের গাছ বিধায় বছরের যে কোন সময়ই লাগানো যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানো ভালো

 

Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/dragon-fruit-distance-R.jpg

গাছ থেকে গাছের দূরত্ব

বংশ বিস্তার

ফলের বংশ বিস্তার অত্যান্ত সহজ বীজ দিয়েও বংশ বিস্তার করা যেতে পারে তবে এতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে সেজন্য কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই উত্তম কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং ফলও তাড়াতাড়ি ধরে কাটিংকৃত একটি গাছ থেকে ফল ধরতে ১৮-২৪ মাস সময় লাগে

 

Description: http://www.krishibangla.com/mediafile/image/horticulture%20photo%20gal/Dragon-fruit-plant-in-pot-R.jpg

কাটিং এর মাধ্যমে ড্রাগন ফ্রুট এর বংশবিস্তার

রোগ বালাই পোকা-মাকড়

রোগ বালাই

ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না তবে মূল পচা, কান্ড গোড়া পচা রোগ দেখা যায়

মূল পচা


অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পচে যায় তবে থেকে পরিত্রান পেতে হলে উঁচু জমিতে ফলের চাষ করা ভাল রোগটি Fusarium sp Allernaria sp  ্বারা সংঘটিত হয়

কান্ড গোড়া পঁচা রোগ


ছত্রাক অথবা ব্যাকটিরিয়া দ্বারা রোগ হতে পারে রোগ হলে গাছের কান্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবতীতে অংশে পচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমান বাড়তে থাকে রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাক নাশক (বেভিস্টিন, রিডোমিল, থিওভিট) ইত্যাদি প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়



পোকা-মাকড়
পোকা-মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায় বাচ্চা পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে



পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়  এত গাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যহত হয় ফলে ফুল ফল ধারন কমে যায় পোকা দমনের জন্য যে কোন কীটনাশক যেমন সুমিথিয়ন/ ডেসিস/ ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মি.লি. বা ৫ক্যাপ ভালভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই রোগ দমন করা যায়

ফলন

১৮ - ২৪ মাস বয়সের একটি গাছে -২০টি ফল পাওয়া যায় কিন্তু পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে ২৫-১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় হেক্টর প্রতি  ফলন ২০-২৫ টন